ঢাকা ১৫ই আগষ্ট ২০২৪
*সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙ্গালী শেখ মুজিবের সুযোগ্য কন্যা কি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট দ্বিতীয় বাঙ্গালী?*
প্রশ্নটা হচ্ছে ১৫ই আগষ্ট কার জন্য শোকের দিন? বাংলাদেশের জন্য নাকি শেখ মুজিবের পরিবারের জন্য? এর উত্তর এখন অনেক সোজা আমাদের জন্য।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল কিন্তু শেখ মুজিব তো একমাত্র নেতা ছিলেন না। আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে ৭ই মার্চের ভাষন আর ইয়া হিয়া খানের সাথে প্রধানমন্ত্রিত্ব লাভের আশায় ১৮ দিনের দরাদরির পর দলের দায়িত্ব সাধারন সম্পাদকের (তাজউদ্দিন) কাছে দিয়ে আরামে পুর্ব পাকিস্তান প্রস্থান করেন। প্রখ্যাত সাংবাদিক জনাব বি জেড খুসরু তার বই ‘মিথস্ এন্ড ফ্যাক্টস বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার’-এ লিখেছেন মুজিব ৩২ নম্বরে দোতালায় একটা ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। একজন সেনাসদস্য তার গালে একটা চড় মারে। শেখ মুজিবকে কর্নেল জেড এ খান আদেশ দেন তার সঙ্গে যাওয়ার জন্য। তিনি জানতে চেয়েছিলেন পরিবারকে বিদায় জানিয়ে আসতে পারেন কী না। কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিবারের সবার (স্ত্রী আর শিশু সন্তান রাসেল) সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে এসেছিলেন তিনি। জনাব খুসরু আরও লিখেছেন, “সেনাবাহিনীর গাড়িতে চড়ার সময়ে শেখ মুজিবের খেয়াল হয় যে তিনি পাইপটা ফেলে এসেছেন। কর্নেল আর শেখ মুজিব আবারও ভেতরে গিয়ে পাইপ নিয়ে গাড়িতে ফেরত আসেন। কিছুক্ষণ বাদে শেখ মুজিবের মনে হয় যে তার হয়তো কোনও ক্ষতি করা হবে না। কর্নেলকে তিনি জিজ্ঞাসা করেন, আসার আগে আমাকে জানানো হল না কেন? কর্নেল উত্তর দিয়েছিলেন, সেনাবাহিনী আপনাকে দেখাতে চেয়েছিল যে আপনি নিজেই গ্রেপ্তার হতে চেয়েছেন।”
শেখ মুজিবের কুকর্মের জন্যই সপরিবারে নিহত হয়েছেন। স্বাধীনতার লাভের পর যত রকমের সুযোগ সবই তিনি নিয়েছেন (মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, এবং তিনি বেঁচে থাকতে কেন মুজিব দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা নিলেন?)। সবকিছু নিতে নিতে যখন বুজলেন সব হারাবেন তখনই আওয়ামী লীগের (ভোট ডাকাতির নির্বাচন) ২৯৩টা সিট সংসদে থাকার পরও (সর্বনিম্ন ১০ সিট না হলে সংসদে বিরোধী দল হওয়া যায় না) প্রধানমন্ত্রী থেকে ১৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি হলেন আর বাকশাল কায়েম করলেন। শেখ মুজিবের জন্য তাঁর দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দুর্নীতি একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অন্যদিকে দলের একটি অংশ বেরিয়ে যাওয়ার পর সরকার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছিল (লেখক ও গবেষক বদরুদ্দিন উমর)। তখন বিরোধীদের ওপর নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা নিয়েও পরিস্থিতি সামলাতে না পেরে শেখ মুজিব সব ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে বাকশাল গঠন করেছিলেন বলে মি. উমর উল্লেখ করেছেন।
শেখ মুজিব নিজে না করলেন মুক্তিযুদ্ধের ঘোষনা, না করলেন মুক্তিযুদ্ধ, না করলেন মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা, আরামে বসে রইলেন করাচীতে অথচ স্বাধীন দেশে (১০ই জানুয়ারী ১৯৭২) ফিরলেন আর ১২ই জানুয়ারী ১৯৭২ সনে হয়ে গেলেন রাষ্ট্রপতি। ৩লক্ষের জায়গায় ৩০লক্ষ (ইংরেজীতে মিলিয়ন মেলানোর গোলপাকে) একটা মিথ্যাচার দিয়ে। ৭ কোটি লোকের (তখন একটা পরিবার মানে ১০জন মানুষ) মধ্যে যদি ৩০ লক্ষ মানুষ মারা যায় তাহলে তো প্রতি দুটি পরিবারে অন্তত একজন করে মানুষ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হবার কথা। আমরা বাংলাদেশের সবাই জানি আমাদের আশে পাশের কার পরিবারে কতজন শহীদ হয়েছেন।
এই জালেমকে যারা হত্যা করেছিল তাদের তো জাতীয় বীর হবার কথা ছিল কিন্তু পরিস্থিতির কারনে হয়তো হয় নাই বরং তারা ধিক্কারের স্বীকার হয়েছেন, কেউ কেউ ফাঁসীতেও ঝুলেছেন, কেউ কেউ সাজা ভোগ বা মারা গেছেন আর বাকীরা তো ফেরারী জীবন যাপন করছেন। ধরুন ৫ই আগষ্ট ২০২৪ সালে যদি কোন সামরিক অফিসার শেখ হাসিনাকে হত্যা করতো তাহলে সে তো আজকের জাতীয় বীর তাই না? তাহলে আজকে বাংলাদেশের মানুষ কেন তাদেরকে (মুজিবের হত্যাতারীদের) সাধুবাদ দিচ্ছে না? তারাও তো এক হত্যাতারী, গুমকারী, গণতন্ত্র হত্যাতারী, জুলুমবাজের হাত থেকে দেশকে দ্বিতীয়বার স্বাধীন করেছিল? আমি এখনকার তরুন-তরুনীদের বলবো ১৯৬৯ থেকে ১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫ সালের ইতিহাস দাদা,দাদী,নানা,নানী, বাবা,মাদের কাছ থেকে সত্যিটা শুনে বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস জানার জন্য এবং ১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫ সনের সেই বীরদের স্মরন করতে। যে কোন হ্ত্যাকারীই হত্যাকারী (মুক্তিযোদ্ধারাও শত্রুকে যুদ্ধের ময়দানে হত্যা করেছে) কিন্তু কোন প্রেক্ষিতে তারা এই কাজ করতে বাধ্য হয়েছিল? তারা হত্যা করেছিল তাকেই যে জুলুমবাজীর একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছিল, দুর্ভিক্ষ তৈরী করেছিল, যার ছেলে (শেখ কামাল) বাংলাদেশ ব্যাংক লুট করতে গিয়ে (পুলিশের ছোড়া) গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। যারা মুজিবকে হত্যা করেছিল তারা তো সবাই মুক্তিযোদ্ধা। তারাই তো দেশের ধ্বংসকে প্রতিরোধ দ্বিতীয়বার দেশ স্বাধীন করেছিল শেখ মুজিবকে হত্যা করে।
বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা খুনি হাসিনা ১৫ বছরে কি কি করেছে তা এখন সবারই জানা। সেগুলো নিয়ে কথা নাই বলি। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন ও স্বজন হারানোর বেদনা ত্বত্ত দিয়ে হাসিনা যেভাবে এদেশের মানুষকে শোষন ও শাসন করেছে তাহলে হাসিনা কেন সর্বকালের দ্বিতীয় সর্বশ্রেষ্ট বাঙ্গালী নয়?
হাসিনাকে এখন কোন দেশ নিতে চায় না। ভারতেরও গলারকাটা হয়ে আছে। হাসিনার পরবর্তী গন্তব্য বাংলাদেশেই যদি ভারত তাকে হত্যা না করে। আর বাংলাদেশেই তার ফাঁসী হবে। যেভাবে সারা বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে গুম, হত্যা, দুর্নীতির মামলা হচ্ছে আর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তার বিরুদ্ধে যতগুলো মামলা হতে চলেছে তাতে হাসিনার দেশে-বিদেশে কোথাও রক্ষা নাই। তার রক্ষা একমাত্র বাংলাদেশই যদি এই দেশের জনগণ মাফ করে। এবং এই মাফের আশায় পুত্র জয়কে দিয়ে আওলানো মার্কা কথাবার্তা ও নিজের খোলা চিঠি (বাপের শিখানো মিথ্যাচারের কায়দায়) দিয়ে ভেবেছে, যেভাবে স্বজনহারানোর কান্নার নাটক ১৯৮১ সন থেকে করেছে সেইভাবে আবার একটা সুযোগ নিবে। হাসিনা আসো তোমার জন্য সর্বকালের দ্বিতীয় সর্বশ্রেষ্ট বাঙ্গালী উপাধীতে ভূসিত করার জন্য এদেশের ছাত্র-জনতা অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
বঙ্গবন্ধুকে হাসিনা ৫ই আগষ্ট দ্বিতীয়বার হত্যা করলো এই বাংলার মাটিতে। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় মৃত্যু দিবস ৫ই আগষ্ট ও প্রথম মৃত্যু দিবস ১৫ই আগষ্ট। আহা রে বঙ্গবন্ধুর সু্যোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার রাজনীতি, পিতার মৃত্যু দিবস উদযাপন করবে আগেরটা পরে আর পরেরটা আগে।
লেখক- মা. আরিফ
১৫ই আগষ্ট ২০২৪।