
ঢাকা ১০ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার ২০২৪:
কেন আমাদের জাতীয় সংগীত পরিবর্তন হওয়া দরকার
বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত কেন বাংলাদেশ বিরোধী তা নিয়েই নিম্নে আলোচনা:
শুরুর ইতিহাসের প্রাথমিক ভূমিকা:
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বঙ্গভঙ্গ এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ই জুন ভগিরতি নদীর তীরে পলাশীর আম বাগানে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাদ্দৌলার পরাজয়ের মাধ্যমে এ ভারতীয় মহাদেশে ইংরেজদের শাষনের গোড়াপত্তন হয়। তৎকালীন বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, আসাম ও আরো কিছু অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয়েছিল বাংলা প্রেসিডেন্সি। এর আয়তন বিশাল হওয়াই পুরো বাংলা প্রেসিডেন্সিকে একসাথে শাষন করা ব্রিটিশদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব ছিল। ১৯০৩ সালে লর্ড কার্জন (যার নামে বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল) এ অঞ্চলের বড় লাট সাহেব হয়ে আসলে তিনি বাংলাকে বিভাজন করার সিদ্ধান্ত নেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ১৯০৫ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর বঙ্গভঙ্গ করে রাজশাহী, ঢাকা, চট্টগাম ও আসামকে নিয়ে গঠিত করেন পূর্ব বঙ্গ যার রাজধানী হয় ঢাকা। এ সময় লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের পক্ষে ঢাকার নওয়াব সলিমুল্লাহ সহ অনেক মুসলিম নেত্রিবৃন্দের সমর্থন লাভ করেন যদিও হিন্দুরা এর ঘোর বিরোধিতা করেছিল।
বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন রবীন্দ্রনাথের প্রাণদান ও ভূমিকার পরবর্তী প্রভাব আসলে কী ছিল? এটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বিরোধী আন্দোলনের জের ধরেই সাত বছর পর বঙ্গভঙ্গ রদ হয়। রদ হওয়ার ফলে প্রথমত পূর্ববঙ্গের নেতা ও সচেতন মানুষ আশাহত হন। কেননা বঙ্গভঙ্গ হওয়ার ফলে পূর্ববঙ্গ বেশকিছু সুবিধা আসার কথা। অনেকে বলে থাকেন বাংলা ভাগ হাল পূর্ব বাংলার ওপর পশ্চিমবঙ্গ ও সেখানকার এলিটদের স্বার্থ বিঘ্নিত হতো বলেই তারা এর বিরোধিতা করেছিল। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির রবীন্দ্রনাথও সে এলিটদের একজন। ফলে বঙ্গভঙ্গ রদ হলে তাদের জমিদারি ও অন্যান্য আয় রোজগার ও ব্যবসা-বাণিজ্য ঠিকঠাক চলছিল। এতসবের পর মোটামুটি এমন একটা মতে পৌঁছানো যায়, রবীন্দ্রনাথ যোগ দিয়েছিলেন বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে এবং বিষয়টি তার জন্য ছিল সময়ের দাবি। তিনি এ আন্দোলন সরাসরি যুক্ত ছিলেন মাত্র তিন মাস। এর আগে-পরে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে তার অংশগ্রহণ নেই। কিন্তু স্বদেশী গান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে তার মত ও সর্বোপরি বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে তার অবস্থান এক ধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব সত্যিই সৃষ্টি করেছিল। এতে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে গতি এসেছিল। তার ফলেই রদ হয়েছিল বঙ্গভঙ্গ। ফলে বঞ্চিত হয়েছে পূর্ববঙ্গ ও মুসলিম সমাজ।
১৯৪৭ সালে বঙ্গভঙ্গ ভারত বিভাজনের একটি অংশ হিসেবে ধর্মের উপর ভিত্তি করে ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত বঙ্গ প্রদেশ ভারত এবং পাকিস্তানের অংশ হিসেবে বিভক্ত হয়। প্রধানত হিন্দু অধুষিত পশ্চিমবঙ্গ ভারত এবং মুসলিম অধুষিত পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হয়।
ভূচিত্রে পূর্ব এবং পশ্চিম বাংলার অবস্থান দেখানো হচ্ছে ১৯৪৭ সালের ২০ জুন, বঙ্গীয় আইন পরিষদের বঙ্গ প্রদেশের ভবিষ্যত নির্ধারণের জন্য মিলিত হয়
যেখানে ভারত বা পাকিস্তানের মাথা সংযুক্ত বাংলা বা পূর্ব বাংলা এবং পশ্চিমবঙ্গে বিভক্ত যথাক্রমে বাঙালি মুসলমান এবং বাঙালি হিন্দুদের আবাসস্থল অধিবেশান, পরিষদ ১২০-৯০ দ্বারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অব এটি ঐক্যবদ্ধ বা অবিভক্ত থাকবে। পরে, ৫৮-২১ ভোটে সিদ্ধান্ত নেয় যে প্রদেশটি বিভক্ত করা গণপরিষদে যোগদান করা উচিত। পূর্ব বাংলার ভোটে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে প্রদেশটি বিভক্ত করা ক্ষেত্রে পূর্ব বাংলা পাকিস্তানে যোগ দেবে। ভারতীয় তারিখকে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিষ্ঠা দিবস অর্থাৎ সালের ৬ জুলাই সিলেট গণভোটে আসাম থেকে সিদ্ধান্ত হয়।
হিসাবে গঠনের প্রস্তাব হয়। প্রাথমিক যৌথ যে যদি বঙ্গ পাকিস্তানের নতুন গণপরিষদে যোগ দেয় পশ্চিমবঙ্গের আইনপ্রণেতাদের একটি পৃথক বৈঠকে উচিত এবং পশ্চিমবঙ্গকে ভারতের বিদ্যমান আইনপ্রণেতাদের আরেকটি পৃথক সভায় ১০৬-৩৫ উচিত নয় এবং ১০৭-৩৪ সালের মধ্যে দেশভাগের জনতা পার্টি ও পশ্চিমবঙ্গের রাজভবন এই ২০ জুন ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ হিসাবে পালন করে। ১৯৪৭ সিলেটকে বিচ্ছিন্ন করে পূর্ব বাংলায় একীভূত করার ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের শহিদদের স্মরাণ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আবদুল লতিফের সুর পূর্বপাকিস্তানে রবীন্দ্রচর্চা একপ্রকার নিষিদ্ধ ছিল। ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদ ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী দেওয়া ‘আমার ভাইয়ের রাক্ত রাঙানো’ ছাড়াও ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি পরিবেশন কারে। এরকম গান গাওয়ার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ উদ্যোক্তা ছাত্রদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল। এরপর ১৯৫৩-৫৪ সালের ডাকসুর অভিষেক অনুষ্ঠানে আমার সোনার বাংলা’ গানটি গাওয়া হয়। ১৯৫৬ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশান পশ্চিম পাকিস্তানের কিছু সংসদ সদস্যদের সম্মানে কার্জন হলে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল। যার উদ্যোক্তা ছিলেন গণপরিষদ সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান। সেই অনুষ্ঠানে বাঙালি সংস্কৃতিকে তুলে ধরার নিমিত্তে রবীন্দ্রনাথ, ডি এল রায়, নজরুল, লোকগান পরিবেশন করা হয়। শেখ মুজিব রবীন্দ্রসঙ্গীতজ্ঞ সনজীদা খাতুনকে ‘আমার সোনার বাংলা গাইবার জন্য অনুরোধ করেন। সঞ্জিদা খাতুনের মতে পাকিস্তানীদের কাছে ‘সোনার বাংলা’র প্রীতি ও ভালোবাসার জানান দিতে এবং গানটি বাঙালিকে কত খানি আবেগ তাড়িত করে, তা বোঝাবার জন্যে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতিনিধিদেরকে গানটি শেখ মুক্তির শোনাতে চেয়েছিলেন। ১৯৫৮ সালে আয়ুব খান সামরিক শাসন জারী করেন। পরের বছর পাকিস্তানের করাচিতে এক লেখক সম্মেলনে আইয়ুব খান ঘোষণা দেন পাকিস্তানের অভান্তার অসাম্প্রদায়িক চেতনা, রবীন্দ্রনাথ, বাঙালিত্ব এগুলোর চর্চা পাকিস্তান চেতনার পরিপন্থী
হিসেবে গণ্য এবং কাঠার হস্তে তা দমন করা হবে। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথের জন্মের শতবছর পূর্ণ ছওয়ায় জন্মশত বার্ষিকী পালনের জন্য ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী সামরিক শাসানর দোর্দন্ড প্রতাপ উপেক্ষা কার রবীন্দ্রজন্ময়ন্তী উৎযাপন করেন। যাকে সুধী মহল সে সময়ের প্রেক্ষাপটে সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করে। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এরূপ পক্ষে বিপাক্ষর রাজনীতির মাঝে ১৯৬৭ সালে পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে অপ্রাসঙ্গিকভাবে সরকারী দলের নেতা আবদুস সবুর খান ইসলাম রক্ষার নামে রবীন্দ্রনাথের বিরোধিতা করেন। কিন্তু বিরোধী দলের বাঙালিরা ব্যাপক বাঞ্ছিতণ্ডা করার একপর্যায়ে বিরোধী দলের সদস্য সোলায়মান খান বালছিলেন, যারা রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে, তারা ঢাকা গেলে বিমানবন্দরেই তাদের ঠ্যাং ভেঙে দেওয়া হবে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৭ সালে রাষ্ট্রীয় প্রচারযন্ত্রে রবীন্দ্রসংগীত সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। তার প্রতিবাদ করে মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী সহ একাধিক বুদ্ধিজীবি বিবৃতি প্রদান করে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিবাদের মুখে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। ১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র থেকে মুক্তি পেয়ে শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় বলেন, আমরা রবীন্দ্রনাথের বই পড়িবই, আমরা রবীন্দ্রসংগীত গাহিবই, এবং রবীন্দ্র সংগীত এই দেশে গীত হইবেই। ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি চাকার পল্টন ময়দানে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগ আয়োজিত এক জনসভায় গানটি গাওয়া হয়। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১ মার্চ গঠিত হয় স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। পরে ৩ মার্চ তারিখে ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভা শেষে ঘোষিত স্বাধীনতার ইশতেহারে এই গানকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে ঘোষণা করা হয়। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) শেখ মুজিবুর রুমানের ৭ই মার্চের ভাষণের আগেও গানটি গাওয়া হয়েছিল। ২৩ মার্চ স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা প্যারোডও গানটি গাওয়া হয়। মুজিবনগরে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার এই গানকে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গানটি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে নিয়মিত পরিবেশিত হতো। মুক্তিযুদ্ধের সময় গানটির বর্তমানে প্রচলিত যন্ত্রসুর করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সুরকার অজিত রায়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে এই গান প্রথম জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গাওয়া হয়।
বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত
বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ এর রচয়িতা ও সুরকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৩১২ বঙ্গাব্দে ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকার আশ্বিন সংখ্যায় গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়। এটি বীন্দ্রনাথের ‘গীতবিতান’ গ্রন্থের স্বরবিভান অংশভুক্ত।
প্রথম ১০ লাইন।
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।
ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
মরি হায়, হায় রে-
ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি।।
কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো- কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে।
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,
মরি হায়, হায় রে-
মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি।
পরের ১৫ লাইন
তোমার এই খেলাঘরে শিশুকাল কাটিল রে,
তোমারি ধুলামাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানি।
তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দীপ জ্বালিস ঘরে,
মরি হায়, হায় রে-
তখন খেলাধুলা সকল ফেলে, ও মা, তোমার কোলে ছুটে আসি।।
ধেনু-চরা তোমার মাঠে, পারে যাবার খেয়াঘাটে,
সারা দিন পাখি-ডাকা ছায়ায়-ঢাকা তোমার পল্লীবাটে,
তোমার ধানে-ভরা আঙিনাতে জীবনের দিন কাটে,
মরি হায়, হায় রে-
ও মা, আমার যে ভাই তারা সবাই, ও মা, তোমার রাখাল তোমার চাষি।। ও মা, তোর চরাণাত দিলেম এই মাথা পোত-
দে গো তোর পায়ের ধূলা, সে যে আমার মাথার মানিক হবে।
ও মা, গরিবের ধন যা আছে তাই দিব চরণতলে,
মরি হায়, হায় রে-
আমি পারর ঘরে কিনব না আর, মা, তোর ভূষণ বাল গলার ফাঁসি।
একবিংশ শতাব্দীতে এসে অনেক দেশ জাতীয় সংগীত পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা স্পষ্ট যে বিশ্বব্যাপী জাতীয় সঙ্গীতের পরিবর্তন হাচ্ছে। আধুনিক মূল্যবোধ এবং সমসাময়িক সমাজের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রকৃতির প্রতিফলন নিশ্চিত করে বেশ কয়েকটি দেশ তাদের সঙ্গীত সংশোধন করার জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ নিয়েছে। এই পরিবর্তনগুলি কেবল শব্দ এবং সঙ্গীতের ক্ষেত্রে নয়; তারা সকল নাগরিককে অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় গর্ববোধ গড়ে তোলার বিষয়ে। এই প্রবণতার একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণগুলো:
নাইজেরিয়া
২৯মে ২০১৪, যখন নাইজেরিয়া তাদের পুরানো জাতীয় সঙ্গীতকে দেশের সরকারী জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই পদক্ষেপটি জাতীয় প্রতীকগুলির গুরুত্ব এবং জনগণকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকাকে বোঝায়। তাদের পূর্ববর্তী সঙ্গীতে প্রত্যাবর্তন করে, নাইজেরিয়া তার ঐতিহাসিক পরিচয়ের একটি অংশ স্বীকার করে যখন সম্ভাব্য ভিত্তিগত মূল্যবোধে ফিরে আসার ইঙ্গিত দেয়।
অস্ট্রেলিয়া
২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে আস্ট্রলিয়ানরা তাদের জাতীয় সংগীতের একটি ভিন্ন সংস্করণ গাইবেন। নতুন এ জাতীয় সংগীতে আস্ট্রলিয়াকে আর ‘ইয়াং অ্যান্ড ফ্রি’ হিসেবে আর অভিহিত করা হবে না। আদিবাসীদের সুদীর্ঘ ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটানোর অংশ হিসেবেই এ পরিবর্তন প্রখানে তারা যুক্ত তারাছ “উই আর ওয়ান অ্যান্ড ফ্রি’।
অস্ট্রিয়া
২০১২ সালে লিঙ্গ সমতা আনার জন্য অস্ট্রিয়ার জাতীয় সংগীতে ‘ছেলেরা-এর জায়গায় ‘মেয়েরা এবং ছেলেরা” লেখা হয়েছে।
কানাডা
উত্তর আমেরিকার এই দেশটিও সম্প্রতি তাদের জাতীয় সংগীতকে আরো লিঙ্গ নির্বাপক্ষ করেছে। সংগীতের দ্বিতীয় লাইনে ‘তোমার সব ছেলেরা’-এর জায়গায় লেখা হয়েছে “আমরা সবাই”।
নেপাল
২০০৮ সালে নেপালে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়। তার আগের বছর নেপালে নতুন একটি গানকে জাতীয় সংগীতের স্বীকৃতি দেয়া হয়। ১৯৬২ সালে গ্রহণ করা নেপালের আগের জাতীয় সংগীতে রাজতন্ত্রের প্রশংসা ছিল। তাই এতে পরিবর্তন আনা হয়।
আফগানিস্তান
দেশটিতে বেশ কয়েকবার জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন আনা হয়। আলবান শাসনামলে আফগানিস্তানে কোনো জাতীয় সংগীতই ছিল না। পরে ২০০২ সালে পুরোনো জাতীয় সংগীতকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। পরে ২০০৬ সালে তৎকালীন কারজাই সরকার সবকিছু নতুন করে শুরু করতে জাতীয় সংগীতও পরিবর্তন করে।
রুয়ান্ডা
আফ্রিকার এই দেশটির কথা উঠালই গণহত্যার কথা মানে পড়ে। ১৯৯৪ সালে মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে ওই দেশে পাঁচ থেকে ১০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। গণহত্যা পরবর্তী রুয়ান্ডার ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে দেশটি ২০০১ সালে একটি নতুন জাতীয় সংগীত বেছে নেয়।
দক্ষিণ আফ্রিকা
দেশটি ১৯৯৭ সালে আগের দু’টি জাতীয় সংগীত থেকে কিছু অংশ নিয়ে নতুন একটি জাতীয় সংগীত তৈরি করে। আফ্রিকান ও ইংরেজি ভাষায় গানটি রচিত। তবে আফ্রিকান ভাষার অংশটি কর্ণবাদ আমলে ব্যবহৃত জাতীয় সংগীতের অংশ হওয়ায় এর সমালোচনা করেন অনেকে। নেলসন ম্যান্ডেলা সেটি রিকনসিলিয়েটরি ব্যবস্থা হিসেবে বর্ণবাদ-পরবর্তী দক্ষিণ আফ্রিকার সংগীত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।
উপসংহারঃ
বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ইসলাম বিরোধী, জাতীয়তাবাদের মূল চেতনার বিরোধী, তিন দেশী লেখকের কবিতার মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা বিরোধীতার
বীজবপন (বঙ্গভঙ্গ বিরোধীতা যার শুরু ১৯০৩ সাল থেকে) এবং স্কুলে বাঙ্গালী হিন্দু জমিদারী প্রথার নম নম যেন সব রাষ্ট্রীয় প্রথায় থাকে তার বন্দোবস্ত ইত্যাদি। সুতরাং আমাদের জাতীয় সংগীত হতে হবে আমাদের দেশের কোন একজন কবির পরীক্ষিত কাব্যিক গ্রন্থ থেকে। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের অনুপ্রেরনা ও অর্জনে আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের অনেক কবিতা আছে। সেখান থেকে আমাদের বিজ্ঞ সরকারকে সঠিকভাবে নির্ধারন করতে হবে।
আমার সোনার বাংলা….. এখানে বাংলাদেশ কোথায়? বাংলা আমাদের ভাষার নাম দেশের নাম নয়। বাংলা বলতে ১৯০৩ সনে যা ছিল তা কালের বিবর্তান ৭১-এ এসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হয়েছে। রাজনৈতিক ও ব্যাক্তিগত উদ্দেশ্য হাসিল করতে গিয়ে সার্বভৌমত্ব জলাব্জলি দিয়ে কোন একটি গোষ্টি
বা দেশকে খুশী করার জন্য ভিন দেশী কবির কবিতা থেকে জাতীয় সংগীত নির্বাচন করা হয়েছে। যাই হোক ৫৪ বছরের পুরানো ইতিহাস আর ময়নাতদন্ত না করে ২০২৪-এ তরুন-তরুনীদের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে বৈষম্য বিরোধের সুবাভাস বইছে সেখানে আমাদের জাতীয় সংগীতে বাংলাদেশ নামটি থাকতে হাবে, ৭১-এর স্বাধীনতা থাকতে হাবে, তারুন্যের শক্তি যে দেশের ভবিষ্যৎ তা থাকতে হবে, বৈষমাহীন সমাজ ও ইসলামের আলোকে ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা থাকতে হাব, দেশের নাগরিকরাই একমাত্র শক্তি ও দেশ যে নাগরিকের জন্য তা থাকতে হবে।
লেখকঃ ম. আরিফ
সুত্রঃ গুগল থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন তথা ও উপাত্ত বিশ্লেষন করে।