আমাদের দেশের প্রায় সবাই কোনো না কোনো ধরনের সবজি পছন্দ করেন। সবার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সবজি থাকে। দ্রুত বাড়ে এমন সবজি চাষাবাদ করতে আগ্রহী। আমাদের দেশে পুরো বছর বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হয়। শীতকালেই সবচেয়ে বেশি সবজি পাওয়া যায়। শীতকালে যত ধরনের সবজি পাওয়া যায়, তা বছরের অন্য কোনো সময় পাওয়া যায় না। এ সবজিগুলোর পুষ্টিগুণ বলেও শেষ করা যাবে না।
শীতকালে নানা ধরনের সবজির বাণিজ্যিক চাষ যেমন হয়, তেমনি শৌখিন চাষি যারা ছাদে এবং নিজেদের আঙ্গিনায় সবজি চাষ করেন, তাদের জন্যও এই সময়টা সবচেয়ে উপযোগী। শীতকালীন সবজির মধ্যে শিম, বাঁধাকপি, ফুলকপি, গাজর, মটরশুঁটি, মুলা, পালংশাক, ওলকপি, লালশাক, লাউশাক, করলা, বেগুন, টমেটো, বরবটি, আলু।
জানা যাক এমন কিছু পরিচিত সবজির কথা, যেগুলো থেকে আসছে শীতে দ্রুত ফসল পেতে পারেন। যারা শৌখিন চাষি তারা তাদের ছাদে, বারান্দায় টব, ড্রাম, অব্যবহৃত প্লাস্টিক কৌটা, পানির বোতলে এ সবজি চাষ করতে পারেন।
মুলা: মুলা লেটুসের সারির মাঝখানে লাগাতে পারেন। এতে অল্প জায়গায়ই দুটি ফসল পেতে পারেন। মাটির .৫ ইঞ্চি নিচে মুলার বীজ লাগান। বীজ বপনের আগেই মাটিতে সেচ দিন। চারা গজানোর আগ পর্যন্ত আর পানি দেয়ার প্রয়োজন নেই। চারা একটু বড় হলে দু-তিন সপ্তাহ অল্প পরিমাণে সেচ দিন। দু-তিন সপ্তাহ পরই মুলা সংগ্রহ করা যায়। মুলা সালাদ, রান্নার সবজি হিসেবে খুবই জনপ্রিয়।
গাজর: গাজরে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ নেই বললেই চলে, যে কারণে চাষ করাও খুব সহজ। এর চাষ পদ্ধতি অনেকটা মুলার মতোই। ৫-৬ ইঞ্চি পর পর গাজরের বীজ বপন করুন। সেচ দেওয়ার পদ্ধতি মুলার মতোই। গাজরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বিটা ক্যারোটিন আছে। সালাদ হিসেবে আমাদের দেশে বেশি জনপ্রিয়।
পালংশাক: পালংশাকের বীজ ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে একটি পরিষ্কার সুতি কাপড়ে মুড়ে রাখুন। পরবর্তী ২৪-৪৮ ঘণ্টায় এর বীজ বোনার উপযোগী হবে। তবে বীজ বপনের পূর্বে মাটিতে ভালোভাবে জৈব সার দিন। মাতি প্রস্তুত হলে একটি নিড়ানি দিয়ে মাটি কুপিয়ে ঝুরঝুরে করে বীজ বপন করুন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আপনি শাক তুলতে পারবেন। আগে যে গাছগুলোর পাতা বেরুবে সেগুলো আগে তুলে নিন।
মটরশুঁটি: মটরশুঁটির বীজ দু-তিন ইঞ্চি পরপর মাটির এক ইঞ্চি নিচে বপন করুন। বীজ থেকে চারা গজালে মাচা করে দিন। যারা বারান্দায় লাগাবেন তারা সুতা দিয়ে বারান্দার গ্রিলে উঠিয়ে দিন। ভালো ফসলের জন্য নিয়মিত পানি দিন। মটরশুঁটিতে ভিটামিন এ, বি ও সি আছে। ঠিকমতো পরিচর্যা করতে পারলে ধরবে প্রচুর পরিমাণে।
মরিচ: মরিচ গাছ লাগানোর জন্য নিজেই মরিচের চারা উৎপাদন করতে পারেন। এ জন্য ভালো জাতের বীজ সংগ্রহ করে বীজ বপনের আগের রাতে বীজগুলোকে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর একটি টবে বা ড্রামে বীজগুলো বপন করুন। মরিচের বীজ থেকে চারা গজাতে কিছুদিন সময় লাগে। সুতরাং বিচলিত হবেন না। বীজ থেকে চারা গজানো শুরু করলে চারা উঠিয়ে অন্য একটি টবে চারাটি লাগান। টবের আকার ছোট হলে একটি টবে একটি চারা লাগান, বড় হলে দুটি লাগাতে পারেন। সব ধরনের মরিচের চাষ পদ্ধতি প্রায় একই। আপনি চাইলে ক্যাপসিকামও লাগাতে পারেন। একটি মরিচ গাছ থেকে আপনি অনেক দিন পর্যন্ত মরিচ পাবেন।
পেঁয়াজ: পেঁয়াজ লাগানোর আগে মাটি ভালোভাবে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে, যাতে করে মাটিতে কোনো পাথর বা ইটের কণা না থাকে। তারপর পেঁয়াজের বীজ বপন করতে হবে। সপ্তাহে একদিন পানি দিতে হবে এবং কিছুদিন পর পর মাটিতে নিরানি দিতে হবে। অল্প কিছুদিন পর থেকেই পেঁয়াজকলি সংগ্রহ করতে পারবেন। ফুল চলে এলে পেঁয়াজ সংগ্রহ করতে পারবেন।
টমেটো: টমেটো গাছ লাগানোর জন্য আপনি একটি আলাদা টবে বীজতলা বানিয়ে নিতে পারেন। সেখানে টমেটোর বীজ বপন করুন। চারা একটু বড় হলে সেখান থেকে তুলে আলাদা একটি টবে লাগান। একটি টবে একটি করে চারা লাগান। চারা বড় হলে একটি খুঁটি দিয়ে চারাটি বেঁধে দিন। কিছুদিন পর থেকেই ফুল আসা শুরু করবে। নিয়মিত পানি দিন। মাটিতে জৈব সার দিন।