ইসলামে নেশা বা মাদক সেবন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং অপবিত্র কাজ। কারণ মাদক কিংবা নেশা মানুষের মস্তিষ্ককে বিকল করে দেয়। মাদক সেবনের ফলে কোনো মানুষ স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী যেসব পানীয় নেশা সৃষ্টি করে তা হারাম।
কুরআনুল কারিমে নেশা সৃষ্টিকারী জিনিস মদকে নিষিদ্ধ বস্তু হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ইসলামের নির্দেশনা অমান্য করে যদি কেউ মদ বা মাদক জাতীয় দ্রব্য সেবনে আসক্ত হয়ে পড়ে, তারা কি ঈমানদার?
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা মাদক সেবনসহ এসব অবৈধ কাজ নিষিদ্ধ হওয়া সম্পর্কে একাধিক আয়াতে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা তুলে ধরেছেন। তাহলো-
– يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِن نَّفْعِهِمَا وَيَسْأَلُونَكَ مَاذَا يُنفِقُونَ قُلِ الْعَفْوَ كَذَلِكَ يُبيِّنُ اللّهُ لَكُمُ الآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُونَ
তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, (তাদের) বলে দাও, এ দুটির মধ্যেই রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়। ( সুরা বাকারা : আয়াত ২১৯)
– يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالأَنصَابُ وَالأَزْلاَمُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে মুমিনগণ! এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ ঘৃণ্য বস্তু। এসব শয়তানের অপবিত্র কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক। যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৯০)
– إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاء فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَن ذِكْرِ اللّهِ وَعَنِ الصَّلاَةِ فَهَلْ أَنتُم مُّنتَهُونَ
শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শুত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন ও কি নিবৃত্ত হবে?’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৯১)
যেসব জিনিস মানুষের মস্তিষ্ক বিকৃতি করে দেয়। স্বাভাবিক জীবন-যাপনে বাধাগ্রস্ত করে, সে জিনিস ব্যবহারের ব্যাপারেই ইসলামের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। হাদিসে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যেসব পানীয় নেশা সৃষ্টি করে, তা হারাম।’ (বুখারি)
তাছাড়া মাদকে আসক্ত ব্যক্তির কোনো আত্মমর্যাদাবোধ বলতে কিছু থাকে না। আর না থাকে তাদের লাজ-লজ্জা। অথচ বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ বুখারির এক বর্ণনায় এসেছে, ‘লজ্জা ঈমানের অঙ্গ। যার লজ্জা নেই, তার ঈমানও নেই।’ (বুখারি)
সুতরাং এ হাদিসের আলোকে তো মাদক সেবনকারীর ঈমান থাকার কথা নয়। তবে এ কথা ঠিক যে, মাদক সেবনকারীর ঈমান হারা না হলেও আল্লাহর নির্দেশ অমান্যকারী হিসেবে মারাত্মক পাপাচারী। আর কোনো পরিপূর্ণ ঈমানদার নেশাগ্রস্ত হতে পারে না।
কেননা কোনো মুসলমানের জন্য মাদক ব্যবহার করা যেমন হারাম, তেমনি তা সংগ্রহ, সংরক্ষণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিতরণ করা সার্বিকভাবেই সম্পূর্ণ হারাম বা নিষিদ্ধ।
শুধু তা-ই নয়, মাদক সেবন বা গ্রহণ করা হারামের সঙ্গে সঙ্গে মাদকের পাত্র বা মাদকের কাজে ব্যবহৃত জিনিস অন্যান্য সাধারণ কাজে ব্যবহার করাও হারাম। হাদিসে বর্ণনায় এসেছে-
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করনে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রবিআহ গোত্রের প্রতিনিধিদের চারটি কাজ করতে নিষেধ করেন। তাহলো-
– (মদপাত্র হিসেবে ব্যবহৃত) শুকনো লাউয়ের খোল।
– সবুজ কলস। এবং
– আলকাতরার পলিশকৃত পাত্র। (বুখারি)
মাদস সেবনকারীর শাস্তি
মেরাজের রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি কেমন হবে তা দেখেছেন। মদ, মাদক ও নেশা গ্রহণকারীদের শাস্তিও তিনি সে রাতে দেখেছেন। তিনি দেখেছেন-
‘তিনি মদ, মাদক ও নেশা গ্রহণকারীদের শাস্তি দেখলেন। তারা জাহান্নামিদের শরীর থেকে নির্গত বিষাক্ত নোংরা পুঁজ পান করছে।’
মুমিন মুসলমানের উচিত, মাদক সেবন থেকে বিরত থাকা। কেননা এ নির্দেশ মেনে চলা ফরজ ইবাদত। আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য সব ধরনের নেশা সৃষ্টিকারী জিনিসই হারাম করেছেন। আল্লাহর নির্দেশ অমান্যকারী ব্যক্তি কিভাবে পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মাদক সেবনের ছোবল থেকে রক্ষা করুন। কুরআন হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী মদ, মাদক ও মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব জিনিস থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।