‘মধ্যবর্তী নয়, ফ্রেশ নির্বাচন’ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তিনি।
কোনো মধ্যবর্তী নির্বাচন হবে না—আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এ রকম বক্তব্যের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা তো এ কথা (মধ্যবর্তী) এখনো বলিনি। আমরা গত নির্বাচন যেটা হয়েছে, সেটাই তো মানছি না; আমরা ওইটাকে অবৈধ বলছি, আমরা ওইটাকে বাতিল করার কথা বলছি। এই নির্বাচন আমরা মানি না, এই নির্বাচন বাতিল করে ফ্রেশ নির্বাচন দেওয়া হোক।’
‘মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা আমরা তো বলিনি ভাই। যখন বলব, তখন দল থেকে অবশ্যই বলা হবে। এখন ব্যক্তিগতভাবে কেউ কিছু বললে, যাঁরা সিভিল সোসাইটিতে আছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ বলতে পারেন—দ্যাট ইজ দেয়ার অপিনিয়ন। আমরা বিশ্বাস করি যে, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। যে কারণে আমরা বলি যে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলে এসেছি, এটাতে আমরা বিশ্বাস করি।’
সংবাদ সম্মেলনে পাবনা-৪, ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ আসনে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনের ভোট নিয়ে গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘তিনটি উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের মতোই ত্রাস সৃষ্টি করে এবং ভোট ডাকাতি করে জাল ভোট মেরে বিরোধী দলের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে জোর করে বের করে দিয়ে ভোট ছিনতাই করেছে। নির্বাচন কমিশন নির্বিকার দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।
রিটার্নিং অফিসার ধানের শীষের প্রার্থীদের অভিযোগ গ্রহণ করেননি। অবলীলায় মিথ্যা কথা বলেছেন চিফ ইলেকশন কমিশনার (সিইসি)। কোনো অভিযোগ নাকি তাঁরা পাননি। ঢাকা থেকেই ১৬২টা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিনা ভোটের স্বঘোষিত সরকার একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্য ভোট ডাকাতির কৌশলে জনগণকে আবারও প্রতারিত করল। অযোগ্য এবং সরকারের বশংবদ নির্বাচন কমিশন ক্রীড়নকের এই ভূমিকা পালন করছে।’
বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ‘এই অবৈধ সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে দেশে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে একদিকে নজিরবিহীন দুর্নীতি ও দুঃশাসন, অন্যদিকে জনগণের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করে ফ্যাসিস্ট রাজত্ব কায়েম করেছে। সুপরিকল্পিভাবে নির্বাচন কমিশন জনগণের ভোটাধিকার বঞ্চিত করে দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।’
কর্মসূচি : সদ্য শেষ হওয়া উপনির্বাচনের ঘোষিত ফল বাতিল ও পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে দুই দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব।
কর্মসূচির মধ্যে আছে আগামীকাল ১৯ অক্টোবর সারা দেশে মহানগর ও জেলায় এবং ২০ অক্টোবর থানা-উপজেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ।
পাবনা-৪, ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের প্রশাসনের ভোট কারচুপির ঘটনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের মারধর করে বের করে ওরা (ক্ষমতাসীন) জাল ভোট দিয়ে ভোট ডাকাতি করেছে, ত্রাস সৃষ্টি করেছে। নির্বাচন কমিশন ইভিএম দিয়ে ভুয়া ফল তৈরি করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করেছে। আমরা নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেছি এবং সেই নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে গতকাল শনিবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত তুলে ধরা হয়।
‘সিন্ডিকেটে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে’
চাল-ডাল-পেঁয়াজ-আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারি দলের মদদপুষ্ট একশ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও সরকারি ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা ও দুর্নীতির কারণে দ্রব্যমূল্য বেড়েই চলেছে। একদিকে করোনাভাইরাসের কারণে কর্মসংস্থানের অভাব ও পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে ফেলেছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির রাশ টেনে ধরতে সরকারের ব্যর্থতার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে স্থায়ী কমিটি।’
পুলিশের ধর্ষণবিরোধী সমাবেশ লোক দেখানো উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সারা দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ব্যাপকতা বৃদ্ধি প্রতিরোধে সরকারের চরম ব্যর্থতা, সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান সংযোজন–সমস্যার একমাত্র সমাধান নয়। ধর্ষকদের সরকারি দলের প্রশ্রয় অথবা ধর্ষক সরকারি দলের সদস্য বলে কোনো বিচার হয় না।’
‘গতকাল ধর্ষণবিরোধী লংমার্চে আন্দোলনকারীদের ওপর ফেনীতে পুলিশের সহায়তায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলা প্রমাণ করেছে যে, পুলিশ গতকাল সারা দেশে যে ধর্ষণবিরোধী সমাবেশ, তা শুধু লোক দেখানো। প্রকৃত অর্থে সরকারের সদিচ্ছার অভাব ও ব্যর্থতাই ধর্ষণের মতো অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে,’ জানিয়ে মির্জা ফখরুল ধর্ষণ মামলার দ্রুত বিচারের মাধ্যমে বিচার নিশ্চিত করার দাবিও জানান।
গতকাল রাতে যশোরে দলের স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য তরিকুল ইসলামের বাসভবন, জেলা বিএনপির কার্যালয়সহ জেলা নেতাদের বাসায় সন্ত্রাসীদের হামলা ঘটনার নিন্দা জানান মির্জা ফখরুল। যশোরের ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবিও জানান তিনি।