সন্ত্রাসবাদ এবং বর্ণবাদের মতো ভয়ংকর ফাঁদ থেকে মুসলিম সম্প্রদায়কে রক্ষার জন্য বিশ্বের মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ান।
মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) তিনি বলেন, সারাবিশ্বের মুসলমানদের উচিৎ মুসলিম সম্প্রদায়কে সন্ত্রাসবাদ এবং বর্ণবাদের মতো ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করা। এসবের মাধ্যমে মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের গভীরে ফাটল ধরানোর ষড়যন্ত্র চলছে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
তুরস্কের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা’র (ওআইসি) সম্মেলনে ভিডিও লিংকে যুক্ত হয়ে এরদোয়ান বলেন, বর্ণবাদ, জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা এবং সন্ত্রাসবাদের মতো সংকটগুলোকে মুসলিমবিশ্বের গভীরে আঘাত করার জন্য ইস্যু বানানো হয়েছে।
‘বিশ্বব্যাপী গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার মুসলমান সন্ত্রাসবাদ এবং সংঘাতের শিকার হচ্ছে।’ এরদোয়ান জোর দিয়ে বলেন, সংকট উপেক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে আমরা মুসলমানরা সন্ত্রাসবাদ, ক্ষুধা, অসমতার মতো নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি।
প্রতিটি সম্মেলনে রাজনৈতিক যুক্তি-তর্ক নিয়ে আলোচনা, মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যেকার সমঝোতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এ কারণে রাজনৈতিক আলোচনার পাশপাশি ধর্মীয় মূলবোধের চর্চা বাড়ানোর জন্য ওআইসির প্রতি আহ্বান জানান এরদোয়ান।
ভুল বোঝাবুঝি এবং ভুল শিক্ষার কারণে মুসলমানরা সমাজে নানা ধরনের সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে বলে তুলে ধরেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাস্তব জীবন এবং ধর্মীয় সর্বজনীনতার মধ্যে শক্তিশালী, দৃঢ়-অবিচল একটি সম্পর্ক গড়ে তোলা জরুরি।
পশ্চিমা কিছু দেশের ইসলামোফোবিক নীতির তীব্র সমালোচনা করেন এরদোয়ান। বলেন, ইসলামোফোবিক পদক্ষেপ ওইসব দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের ব্যর্থতা ঢাকার একটি সফল হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এসব অঞ্চলে ইসলামকে রাষ্ট্র প্রধানরা নিজেদের মতো ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে ফরাসি ইসলাম, ইউরোপীয় ইসলাম এবং অস্ট্রেলিয়ান ইসলামকে তুলে ধরেন এরদোয়ান।
এ ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে বিশেষ করে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইসলাম এবং মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছেস বলে অভিযোগ এরদোয়ানের।
এর আগে ২ অক্টোবর ম্যাক্রোঁ বলেছিলেন, ইসলাম সঙ্কটে। এরদোয়ান তার এ বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন। বলেন, ম্যাক্রোঁর বক্তব্য ইসলামভীতিকে উৎসাহী করবে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিজের ব্যর্থতা লুকানোর জন্য ইসলামকে টার্গেট করেছেন বলেও সমালোচনা করেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট।
এরদোয়ান জোর দিয়ে বলেন, ফ্রান্স মুসলিমবিরোধী একটি পদ্ধতি চালুর চেষ্টা করছে। যেখানে শুধু ঘরে ইসলাম চর্চার অনুমিত থাকবে। বাইরে, কর্মস্থলে, সামাজিক জীবনে ইসলামি বিধিবিধান এবং সংস্কৃতি চর্চায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।
বাইরের থেকে পদ্ধতিগত আক্রমণ এবং নিজেদের ভুলের কারণে মুসলমানদের অভ্যন্তরে ফাটলের যে হুমকি তৈরি হয়েছে তা কোনোভাবেই ধর্মীয় মূল্যবোধে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না বলে সতর্ক হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট।