ভিডিও শেয়ারিংয়ের চীনা অ্যাপ টিকটক নিষিদ্ধ করেছে পাকিস্তান। অনৈতিক ও অশোভন বিষয়বস্তু প্রচার করছে, এমন অভিযোগে পাকিস্তানের টেলিকমিউনিকেশন অথোরিটি (পিটিএ) দেশটিতে টিকটক বন্ধের আদেশ দেয়। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের পর এখন পাকিস্তানও বন্ধু চীনের অ্যাপটি নিষিদ্ধ করল।
ডন-এর খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তান টেলিকমিউনিকেশন কর্তৃপক্ষের (পিটিএ) কাছে প্রথমে অভিযোগ আসে যে অনৈতিক ও অশ্লীল কনটেন্ট প্রচার করছে টিকটক। এ ব্যাপারে টিকটককে সতর্ক করা হয়। এরপরও টিকটক কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় পিটিএ চীনা অ্যাপটি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে টিকটক বেআইনি বিষয়বস্তু যাচাই সন্তোষজনক করতে পারলে এই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করা হবে বলে জানিয়েছে পিটিএ।
পিটিএ জানিয়েছে, টিকটক অনলাইন কনটেন্টের ওপর নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। তাই টিকটককে ব্লক করা হয়েছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পিটিএকে ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং অ্যাপসগুলোকে অশ্লীলতামুক্ত করতে বলেছিলেন। এরপরই নগ্নতা এবং সমকামিতা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে পাঁচটি ডেটিং অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে।
পাকিস্তানে টিকটক নিয়ে আপত্তির শুরু জুলাই মাস থেকে। ওই সময় অ্যাপটিতে অনৈতিক পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে বলে সতর্ক করেছিল পিটিএ। আপত্তিকর পোস্ট বন্ধ না হলে টিকটক নিষিদ্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানানোও হয়েছিল। এর আগে লাইভ স্ট্রিমিং অ্যাপ ‘বিগো’ নিষিদ্ধ করেছিল পাকিস্তান। সেখানেও নৈতিকতার প্রশ্ন উঠেছিল।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী শিবলি ফারাজে জানান, টিকটকে ডেটা সুরক্ষা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন নন, কিন্তু সংস্কৃতি নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাঁর মতে এই অ্যাপের সাহায্যে দেশে দ্রুতগতিতে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ছে।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর মেয়ে বখতায়ার ভুট্টো জারদারি টিকটক নিষিদ্ধের পর টুইট বার্তায় এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘অনৈতিক বিষয়বস্তু আসলে টিকটকে নেই, এটি আছে আমাদের যৌন সমাজেই।’ নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নির্যাতন ও লাঞ্ছিতের ঘটনা ও মামলা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ার খবরের উদ্ধৃতি করে বখতায়ার ভুট্টো বলেছেন, ‘সমাজের অনেক অবনতি হয়েছে। মাদ্রাসায় কী হচ্ছে, জনসমাগম স্থানে কী হচ্ছে দেখেন, সমস্যা টিকটকের মধ্য নয়।’
ভারতেও নিষিদ্ধ টিকটক। সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে চলতি বছরের জুনের শেষ সপ্তাহে টিকটক হ্যালো, শেয়ারইটসহ চীনের ৫৯টি অ্যাপ্লিকেশন নিষিদ্ধ করে ভারত। পরে জুলাইয়ের শেষ দিকে আরও ৪৭টি চীনা অ্যাপস নিষিদ্ধ করা হয়। তথ্যচুরির অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয় টিকটকের বিরুদ্ধে। এবার চীনের বন্ধুদেশ পাকিস্তান টিকটক বন্ধ করে দিল অশোভন কনটেন্টের অভিযোগ তুলে। ট্রাম্প প্রশাসনের ভাষ্য, চীনের এই অ্যাপ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চীন সরকারের কাছে চলে যাচ্ছে ব্যবহারকারীদের তথ্য-উপাত্ত। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে চীন ও অ্যাপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান। চীনের অভিযোগ, প্রস্তাবিত এই নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ভিডিও প্রচার বা প্রকাশের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত জনপ্রিয় অ্যাপ টিকটক। বিভিন্ন গান, বিখ্যাত সিনেমার সংলাপসহ নানা রকম মজাদার অডিওর সঙ্গে ঠোঁট মিলিয়ে ছোট ভিডিও তৈরি করে আপলোড করা যায় টিকটক অ্যাপে। চীনের বাইটড্যান্স তৈরি করেছে টিকটক নামের অ্যাপটি। ছোট ভিডিও শেয়ারের অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস প্ল্যাটফর্মে ১০০ কোটিবার ডাউনলোডের মাইলফলক পেরিয়েছে অনেক আগেই। বেশ কিছুদিন ধরে নানা রকম ভিডিও তৈরির কারণে অ্যাপটি জনপ্রিয় হয়। তবে এর বিরুদ্ধে নানা কুৎসিত ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগও উঠেছে।