গণবিপ্লবের হানিমুন পিরিয়ড শেষে বিপ্লব পরবর্তী প্রকৃত পদক্ষেপ হাতে নাও @ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
যুগে যুগে যেসব জেনারেশনের মধ্যে আমরা জন্ম নিয়েছি বা নিচ্ছি তার তালিকা।
Silent Generation: born between 1928 and 1945.আমাদের দাদা-দাদী, নানা-নানী শ্রেনীর মুরুব্বীরা।
Baby Boomers Generation: born between 1946 and 1964. আমাদের দাদা-দাদী, নানা-নানী পিতা-মাতা শ্রেনীর মুরুব্বীরা।
Generation X: born between 1965 and 1980. আমাদের পিতা-মাতা, বড় ভাই-বোন।
Generation Y: born between 1981 and 1996. আমাদের বড় ভাই-বোন ও আমরা।
Generation Z: born between 1997 and 2012. বাংলাদেশের তরুন প্রজন্ম।
Generation Alpha: born between 2012 and 2024. বাংলাদেশের নুতন তারুন্যের সুচনাকারীরা।
বাংলাদেশে আমরা Gen X এবং Y যখন কলেজে পড়তাম তখন একটা কলেজে যদি ১,০০০ ছাত্র-ছাত্রী থাকতো তাহলে হয়তো খুব সাহসী ছেলে (রাজনৈতিক ও প্রতিবাদী) থাকতো ১০-১৫ জন। প্রতিপক্ষের ধাওয়া আর যদি ককটেল বিস্ফোরিত হতো তাহলে কে কত জোড়ে দৌড় দিয়ে শেফ জোনে গিয়ে আবার সবাই কলার উঁচু করে জড়ো হতাম। আর যদি পুলিশের ফাঁকা গুলি হতো তা হলে তো ভোঁদৌড়। আবার সংঘঠিত হতে ও সাহস অর্জন করতে অনেক সময় লাগতো আমাদের। আর তখনকার সমাজ ব্যবস্থায় তো মেয়েদের সাহসী হবার সুযোগ দেয়াই হতো না। তারা সাহসী হবার চেষ্টা করলেও সমাজ তাদেরকে প্রতিহত করতো। আমাদের সময় ১০-১২ টা শ্লোগান ছিল যা দিয়ে আমরা তারুন্য পার করে দিয়েছি।
আমাদের সময় ৭-৮ লক্ষ্য শিক্ষার্থী SSC পরিক্ষায় অবতীর্ন হলে সারা বাংলাদেশে ৮০ জনের মেধা তালিকা হতো (পাশের হার হতো ৫৫% এর নিচে), হয়তো ২,০০০ এর শিক্ষার্থী ষ্টার মার্ক পেত (১,০০০ নম্বরের মধ্যে ৭৫০ বা তার উপর নম্বর)। আমরা লসাগুর মত অংক মুখস্তও করতাম, আমরা এই অংকের সহজ ফরমুলা BODMAS জানতামই না। যা পরে আমাদের সন্তানদের কাছ থেকে জেনেছি। এখন যখন লক্ষ লক্ষ জিপিএ ৫ বা হাজার হাজার গোল্ডেন জিপিএ পায় তখন আমরা ধরেই নিই যে শিক্ষার মান কোথায় চলে গেছে। আমরা বুজতেই পারি না যে শিক্ষার মান উন্নত না হলেও শিক্ষার্থীদের গুনগত মানের অনেক অনেক উন্নতি হয়েছে। এবারের নিত্য নুতন শ্লোগান আর ভিন্ন রকমের আন্দোলনের প্রোগ্রামগুলো ছিল চোখ ধাঁধানোর মতো।
এবারের আন্দোলনের একটা বড় লক্ষণীয় বিষয় হলো তরুনীদের সামনে থেকে সংগ্রাম করা ও আর ইন্টেলেকচুয়াল বিবৃতিদেয়া ও পুলিশ সেনাবাহিনীকে প্রশ্ন করে বোবা বানিয়ে দেয়া। আন্দোলনের সময় তরুনীরা যেভাবে সামরিক বাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের সাথে কথাবার্তা বলেছে ও সম্নুখভাগে থেকে আন্দোলন করেছ তা অতুলনীয়। আরেকটি লক্ষনীয় বিষয়হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরদের কথা শুনে ও অনুধাবন করে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা যেভাবে তাদের মতামত দিয়েছে ও আন্দোলন করেছে। তারা কিন্তু copy and paste করে নাই। তারা তাদের মতবাদ নিয়ে বড় ভাই-বোনদের পাশে দাড়িয়েছে। জাতির প্রতি, ভাই-বোনদের প্রতি যে আত্মিক বন্ধন এবার দেখেছি তা অতীতে কখনও দেখা যায় নাই। এথেকে বুজা যাচ্ছে যে সামনের প্রজন্ম Gen Alpha বা Gen A আরো কত সুদৃড় হবে।
একটু আমাদের বাংলাদেশের ডেমোগ্রাফির দিকে তাকাই, প্রায় ১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশে নারী পরুষ প্রায় সমান সমান। প্রায় ২ কোটি প্লাস হচ্ছে ৬৫ বছর থেকে তদুর্ধ, ৪৫ থেক ৬৪ বছর পর্যন্ত ৪ কোটি প্লাস, ২০ থেকে ৪৪ বছর পর্যন্ত ৭ কোটি প্লাস, ১ দিন (আগষ্ট ২০২৪) থেকে ১৯ বছর পর্যন্ত ৫ কোটি প্লাস। কর্মক্ষম মানুষ ৮৮% আর তারুন্য ও ভবিষ্যত প্রজন্ম (১৯ বছরের নীচে) সংখ্যা ৬৬%। পৃথিবার কয়টি দেশে এই ধরনের ডোমোগ্রাফি বিরাজ করে? এই অবস্থা বিদ্যমান থাকবে আগামী ১৫-২০ বছর। সুতবাং এরমধ্যে আমাদের দেশকে তৈরী করতে হবে।
এখন আলোচনা করি কিভাবে এই বৈসম্য বিরোধী গণআন্দোলনের মাধ্যমে নুতন বাংলাদেশ বিনির্মানে বর্তমান সরকার ও তারুন্যের শক্তি কিভাবে নির্ভুলভাবে এগিয়ে যেতে পারে। প্রথমেই বলি আমার কাছে এখন কেমন কেমন যেন পুরানো রক্তের গন্ধ আসছে। সন্তানরা, ভাই-বোনেরা এত রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে যে ফ্যাসিস্ট শাসককে সরাতে পেরেছো তা কি কিছুজনের বিনিময় হারের কাছে তোমরা সবাই পরাজিত হবে? শহীদ নূর হোসেন ১৯৮৭ সালের ১০ই নভেম্বর শহীদ হন আর এরশাদের পতন হয় ১৯৯০ সনের ৬ই ডিসেম্বর। পৌনে তিন বছর লেগেছিল এরশাদকে হঠাতে। আর তোমরা মাত্র ৩৬ দিনে এরশাদের চাইতেও কয়েক হাজারগুন শক্তিশালী স্বৈরাচরকে সরিয়েছো। জাতীয় পার্টির চাইতেও দশ হাজারগুন শক্তিশালী রাজনৈতির দলের সরকারকে তোমরা পালাতে বাধ্য করেছো যেখানে হাসিনা পালানোর জন্য মাত্র ৪৫ মিনিট সময় পেয়েছিল। যেখানে বাংলাদেশের অন্য রাজনৈতিক দল গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগকে চুল পরিমান নাড়াতে পারে নাই সেখানে তোমরা কি অসাধ্য সাধন করেছো। এই সফলতায গা ভাঁসিয়ে দিলে কি হবে? তোমরা দেশের রাত জেগে পাহাড়া দিয়েছো, ট্রাফিক নিযন্ত্রন করেছো, লুন্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার করেছো, পরে থাকা টাকা আত্মসাত না করে সরকারের কাছে জমা করেছো, বাজার মনিটরিং করেছো, সরকার কিভাবে গঠিত হবে, কে প্রধান উপদেষ্টা হবেন বা কারা উনার উপদেষ্টাবৃন্দ হবেন তা ঠিক করেছো, আরও অনেক অনেক কিছু। তোমরা শিক্ষার্থীরা আগে তোমাদের পড়াশুনা তারপর সবকিছু। কিন্ত তোমরা যে বাংলাদেশকে নুতন দিনের আশায় আমাদের আলোকিত করেছো সেখানে আমাদের কিছু দাবীতো তোমার শুনতে হবে কারন তোমরাই এদেশের কান্ডারী এবং তোমাদের দিকেই আমরা চেয়ে আছি কারন আমরা তোমাদের আগের দুই জেনারেশন বারবার দেশের সাথে প্রতারনা করেছি। বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান আবেগ বা নিয়মকানুনের রীতি দিয়ে পরিবর্তন করতে গেলে হবে না। বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় সংস্কার করতে হবে গানিতিক ও ব্যবসায়িক প্রশাসনের কায়দায়। আমাদের অন্তরবর্তীকালীন সরকার প্রধান পৃথিবীতে এখন যত রাষ্ট্রপ্রধান আছেন তাদের সাথে তুলনা করলে তিনি এক নম্বরে থাকবেন। সেরকম একজন মানুষ ডঃ ইউনুস যার জীবনে আর অর্জনের কিছু নাই শুধু শত শত বছর মানুষ যেন তাকে স্বরন আর দোয়া করে। আরেকটা দিক হলো আমাদের তরুনদের যোগ্যতা কি এতই কম যে ২১ জনের উপদেষ্টা পরিষদে মাত্র দুইজন তরুনের স্হান হলো? নারী তরুনীরা কেন উপদেষ্টা হলো না। এই সরকারে অন্তত ৩৩% তারুন্যের মিশ্রনের দরকার ছিল। অন্য আরো একটা দিক হলো এই বুদ্ধিমানরা যেন আবার আমলাদের প্যাঁচে পেচিত হয়ে যেন বদমায়েশি শুরু না করে।
এখন সারাদেশের তরুনরা কিভাবে পড়াশুনার পাশাপাশি দেশ বিনির্মানে কাজ করবে তা নিয়ে একটা প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা করি। অবশ্যই একাজের জন্য তাদের পারিশ্রমিক দিতে হবে। যারা এখানে কাজ করবে তাদের সরাসরি কোন রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা থাকতে পারবে না।
প্রস্তাবনা সমুহঃ
১। নারী ছাত্রীদের নুন্যতম ৪০% অংশ গ্রহন থাকতে হবে।
২। একটা জাতীয় বৈশম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কমিটি করতে হবে। যার সংখ্যা নিম্নের অংশে আছে।
৩। কি কি মৌলিক বিষয়ে সংস্কার করতে হবে তার লিস্ট করা যা ১০-১২টার মৌলিক বিষয়ের ভিতর থাকতে হবে।
৪। প্রতিটি উপজেলায় এবং জেলায় সেই প্রতিটি নৌলিক বিষয়ের উপর একজনকে ব্যবস্হাপক করে ৫ জনের একটা টিম হবে। বড় বড় জেলায় এর সংখ্যা দুই বা তিনগুন হতে পারে।
৫। এই ব্যবস্থাপকদের উপরে উপজেলা এবং জেলায় ১জন করে মহাব্যবস্থাপক (মৌলিক বিষয় ভিত্তিক) থাকবে। এই মহাব্যবস্থাপকরা সরাসরি হেড অফিসে রিপোর্ট পাঠাবে।
৬। হেড অফিসে প্রতিটা উপজেলা ও জেলার জন্য একটা করে ডেস্ক অফিসার থাকবে।
৭। এই ডেস্ক অফিসাররা রিপোর্ট করবে হেড অফিসে থাকা মৌলিক বিষয়ের উপর ব্যবস্থাপকদের।
৮। হেড অফিসের ব্যবস্থাপকরা রিপোর্ট করবে জাতীয় কমিটির কাছে।
৯। জাতীয় কমিটির জন্য ২৫ জনের একটা
উপদেষ্টা পরিষদ থাকবে (যেখানে দেশ ও বিদেশের প্রগতিশীল গবেষক, শিক্ষক, রাজনৈতিক বিশ্লেশক, অবসরপ্রাপ্ত সরকারী আমলা, সেনা ও পুলিশ অফিসার, বেসরকারী বড় কর্পোরেট অফিসের অবসরপ্রাপ্ত সিইও, অবসরপ্রাপ্ত নিরীক্ষক, ডাক্তার ও অন্য পেশা)। এই উপদেষ্টারা বিশ্লেষন করে সিদ্ধান্ত দিবেন যা নিয়ে জাতীয় কমিটি বর্তমান সরকারের সাথে কাজ করবে।
১০। সংস্কার হতে হবে দেশের সবার জন্য কোন গোষ্টির সুবিধার জন্য নয়।
১১। যেসব দুর্নীতিকারীদের টাকা উদ্ধার হবে তা একটি সরকারী ফান্ডে থাকবে সেই ফান্ড থেকে ইউএনও, ডিসিদের অফিস খেকে সারা বাংলাদেশে যারা কাজ করবে তাদের পারিশ্রমিক প্রদান করবে।
১২। দুর্নীতিকারীদের প্রতিষ্ঠানে হবে এইগুলোর কার্যালয়।
১৩। সরকারের সমাজকল্যান মন্ত্রনালয় এসব কাজের অডিটিং করবে। যেসব শিক্ষার্থী দুর্নীতিগ্রস্ত হবে তাদেরকে তাৎক্ষনিকভাবে অপসারন করবে।
১৪। যেসব শিক্ষার্থী ইস্তফা দিবে তাদেরকে উত্তরসরী ঠিক করে দিতে হবে এবং নোটিস পিরিয়ড দুই মাসের হতে হবে।
এই বর্তমান সরকারের কাজের যদি স্যাডো সরকার প্রতিষ্ঠিত না হয় এবং সমাজের রন্ধে রন্ধে থাকা দুর্নীতি দূর হবে না। আর কার্যক্রম যদি দেশব্যাপী পর্যবেক্ষিত না হয় তাহলে এত শহীদের রক্তের মুল্যও শোধ হবে না।
সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের বলছি, তোমরা দুইটা বছর শ্রম দাও, তোমাদের হাত ধরেই এই দেশ দুর্নীতিমুক্ত ও সমৃদ্ধ হবে এবং যার ফল তোমরা, তোমাদের পরবর্তী প্রজন্মরা সরাসরি ভোগ করতে থাকবে। একবার যদি দেশ লাইনে আসে আর কেউ লাইনচ্যুত করতে পারবে না। পতিত লাইন মেরামত করে ইন্জিনগুলো লাইনে উঠানো আর বগিগুলো যুক্ত করে রেলগাড়ী দেশব্যাপী চালানোই হলো সবচেয়ে বড় চ্যালেন্জ।
Aura Aura – Yes Cap, Yes Cap
লেখক – ম. আরিফ
১৯শে আগষ্ট ২০২৪।